,

আবারো বসত ভিটার স্বপ্ন দেখছে মানুষ

ফাইল ছবি

আসাদুজ্জামান আজম, নড়িয়া থেকে ফিরে: আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলাকে পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকা হতে মুক্ত করতে চায় সরকার। আর এজন্য পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষায় নেয়া বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির নড়িয়া অংশের কাজে গতি বেড়েছে ১০ গুণ। ওই অংশের ভাঙন রোধে প্রতিদিন ১০ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে নদীর তীর ধরে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিদিন ২০ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে বলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। নড়িয়া হয়ে ক্রমান্বয়ে এ কার্যক্রম জাজিরা অংশ পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার জুড়ে চলবে।

গত রোববার শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্য মতে, পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর যাবৎ পদ্মার ভাঙন কবলে পড়েছে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার একটি বিরাট অংশ।

বিশেষ করে গত বর্ষায় ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। শুধুমাত্র গত বছরই পদ্মা তীরবর্তী সাড়ে ৫ হাজার পরিবার ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়ে। আর বিগত ৪ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে বসত বাড়ি, পাকা দালান, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, হাট-বাজারসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।শরীয়তপুর পওর বিভাগ সূত্র মতে, ভাঙনের কারণে কুণ্ডের চর, সুরেশ্বর লঞ্চঘাট, সুরেশ্বর দরবার শরিফ, চ-িপুর বাসস্ট্যান্ড, বাঁশতলা, সাধুর বাজার, মুলফৎগঞ্জ, মুক্তার চর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নড়িয়া থেকে মুলফৎগঞ্জ যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, শরীয়তপুর জেলার ভাঙন রোধে ২০১২ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হয়। এরপর ২০১৫ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। সমীক্ষা ও কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা’ নামের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্প এলাকাটি পদ্মা সেতু থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ভাটিতে এবং মেঘনা নদীর মোহনা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত।

গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেলেও ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সরকারি সংস্থা খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, জাজিরার অংশে ১ কিলোমিটার এবং নড়িয়া অংশে ৭.৯০ কিলোমিটার প্রকল্প এরিয়ার মধ্যে রয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৯০ কিলোমিটারজুড়ে নদীর তীর রক্ষা কাজে ৫৫৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ৯.৭৫ কিলোমিটার জুড়ে নদী ড্রেজিং কাজে ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা তীরবর্তী নড়িয়া ও জাজিরা অংশ ভাঙন হতে মুক্ত থাকবে, যা পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণাল?য়ের স?চিব কবির বিন আনোয়ার। উদ্বোধনের পর হতে নড়িয়া অংশে চলছে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও কিছুদিনের মধ্যেই প্রকল্পটির আওতায় নদী ড্রেজিং কার্যক্রম জোরে শোরে শুরু হবে। তবে অন্য প্রকল্পের অধীনে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গত রোববার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন সরকারের নতুন নিযুক্ত পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও ভাঙনকবলিত এলাকা শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের সাংসদ একেএম এনামুল হক শামীম। এ সময় শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবীর বিন আনোয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উপমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবার সরকারি সফরে এসে প্রথমেই মুক্তার চর হতে নড়িয়ার মুলফৎগঞ্জ পর্যন্ত তীর পরির্দশন করেন তিনি। এরপর নড়িয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার কর্মকর্তাদের সাথে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন একেএম এনামুল হক শামীম।

পরিদর্শনকালে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, আগামী বর্ষার আগেই ভাঙন রোধে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। নড়িয়ার মানুষ আর ভাঙনকবলিত থাকবে না, এক ইঞ্চি মাটিও আর ভাঙবে না ইনশাল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর নদী রক্ষা কাজের গতি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আরও জোর তৎপরতা শুরু হবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ড্রেজিং কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, নদী রক্ষা কাজ শুরুর পর থেকেই ভাঙনকবলিত মানুষ পদ্মার পাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন। নতুন করে বসত-ভিটা ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশেষ করে বিকাল হলেও নদীর তীরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভিড় দেখা যায়। কেদারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা লাকি বেগম জানান, ‘আমাগো বাড়ি আছিল, ঘর আছিল, অহন কিছু নাই।

এই বিভাগের আরও খবর